Header Ads

বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ গাজীপুর জেলা শাখা

নীল তুমি কার?

ছোট গল্প
           
   --------ইন্দ্রজিৎ  কুমার সাহা

ছায়া ঘেরা পাখি ডাকা শান্ত নিবীর পরিবেশ, এখানেই একটি চৌচালা হাফবিল্ডিং বাড়ীতে  কয়েক বছর যাবৎ বেশ সুখেই বাস করছে নীলোৎপল ও তিথি।বেশ গোছানো সংসার তাদের । বাড়ীটি ঠিক ছবির মত। চারিদিকে ওয়াল ঘেরা উপরে রঙ্গিন টিন,বারানাদায় গ্রিল্ সামনেই ছোট্ট একটা ফুলের বাগান। বাগানে বেশ অদ্ভুৎ ও অপরিচিত গোছের  কিছু রঙ্গিন ফুল। আসলে তিথী রাজশাহী ইউনিভার্সিটি খেকে বোটানিতে মার্স্টাস কমপ্লিট করা মেয়ে কিনা তাই তার বিচিত্র গাছ সংগ্রহের আবদার প্রায়শই মেটাতে হয় নীলের।নীল পেশায় উকিল রাজধানীর সেন্ট্রাল ল কলেজ থেকে  এল.এল.বি পাশ করে নিজ পেশায় থিতু হয়েছেন, ইতিমধ্যে বেশ নাম কামিয়েছেন এই পেশায়। দিন কে রাত রাত কে দিন বানাতে তার মত অদ্ভুৎ রকম পটু কমই আছে গাজীপুর কোর্টে। বাড়ীতে তাদেও দুজনার সংসারে সুখের কমতি নেই.. ভালবাসা উপচে পড়ার যোগার। তবে একটা বিষয়ে নীেেলর অভাববোদ রয়েই গেছে । তাদের দাম্পত্য জীবনে  প্রায় পাচ বছর হতে চলল কিন্তু তাদের এখনও পর্যন্ত কোন সন্তান হয়নি। এই একটি ঘাটতি তাদের সুখের জীবনে।কয়েক বার গাইনী বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরও কোন সমস্যা ধরা পরেনি তাদের কারোর। সেদিন নীল একটা বড় ধরনের কেসে ডিক্রী লাভ কওে বেশ খুশ মেজাজে ছিল, খুশির মাত্রা এতটাই বেশী ছিল যে  সেটা উপভোগ করার জন্য  আকন্ঠ অ্যালকোহল পান করে বাড়ী ফিরতে হল। মদ্যপ অবস্থায়  সে এর আগে কোন দিন বাড়ী ফেরেনি, এই প্রথম বার তাই একটু চিন্তিত সে ঢুলু অবস্থায় কলিং বেল চাপে .. তিথি কে বলে ঘরের দরজা খুলে দেয়।..
খোল সোনা আমি নীল তোমার একমাত্র স্বামী! হা হা হা.. নীলের মদ্যপ অবস্থায় এই হাসি-তে তিথীর সর্বাঙ্গে বিদ্যুৎ বিজলীর ঢেউ খেেেল যায়।নিজেকে কোন রকমে সামলে সে বারান্দার গ্রিলের গেট খুলে দেয়। নীল  কোন ভাবেই নিজেকে ধরে রাখতে পারেনা এ্যালকোহলের নেশায় ভূপাতিত হয়!
তিথি নীলকে ধরে ঘড়ে নিয়ে  বিছানায় শুইয়ে দেয় এরপর তেজোদিপ্ত গলায় বলে,তা হঠাৎ কি কারনে আজকে তোমার মদ গিলতে হল?
আরে কি যে বল তিথু .. আজকে আমিনা  একটা কেসে জিতেছি অ..অনেক টাকা পেয়েছি, বলে নিজের ব্যাগটা বিছানার উপর হাতরাতে থাকে।
তিথি:টাকা না ছাই তোমার কি হবে এত  টাকা দিয়ে। 
নীল: কি হবে মানে,আমার ছেলে মেয়েদেও আমি ভিক্ষুকের মত বড় করব নাকি! আমি যে ভাবে কষ্টে বড় হয়েছি তারাও হবে নাকি!
তিথি: ছেলে মেয়ে..------------
নীল:ওহ.. আমি তো ভুলেঅই গিয়েছিলাম আমাদেও তো কোন ছেলে মেয়েই নাই হা হা হা...
তিথি:  নেই তো..সেটা কি আমার দোষ?
ইীল:য়ুহু আমার দোষ ,আমার ভাগ্যেও দোষ, তোমাকে বিয়ে করেছি এটাই দোষ সালা এতদিন হয়ে গেল একটা সন্তান দিতে পারলনা মাইরি! আবার তেজ দেখানো হচ্ছে! আ্যা! আমি খাব রোজ মদ খাব দেখি কে আটকায় আমায়। নীলৈর এমন বেআইনী কথাায় তিথির গলা সপ্তমে চওে যায় সেও বেশ করা গলায় শাষিয়ে দেয় নীলকে আর এভাবেই শুরু হয় তাদেও দাম্প্যত্য জীবনে দূর্যোগের ঘনঘটা!
এভাবেই সারারাত কেটে যায়! ইীল অচেতন হয়ে বিছানায় পওে থাকে তিথিও সারারাত কেদে বালিশ ভিজিয়ে ফেলে!
সকালের  সূর্যটা আজকে সকাল থেকেই তাপ ছরাচ্ছে,বাইওে প্রচন্ড রোদ নীল নিজের সানগ্লাস খুজছে কিন্তু কিছুতেই খুজে পাচ্ছেনাঅন্যদিন হলে তিথি নিয়ে াজির হতো কিন্তু আজকে তার দেখা নেই।নীল কোর্টে  চলে যায়।
গুড মর্নিং স্যার, ভাল আছেন স্যার? অত্যন্ত মিষ্টি কন্ঠের সম্ভাষনটি নীলৈর কর্ন যুগলে হঠাৎই শান্তিও ঠান্ঠা পরশ দেয়।
নীল: রিটা কেমন আছ? ঊাইওে প্রচন্ড রোদ,রোদে মাথা ফেটে যাবার যোগার !
রিটা: ছাতা কোথায় আপনার আজকে তো দেখছি সানগ্লাসটাও আনেননি স্যার মুখটা অমন শুকনো লাগছে কেন?
ইীল: দারাও দারাও আগে একটু ঠান্ডা হয়ে নেই পওে কথা বলি..
রিটানীলের অত্যন্ত ফ্যাশেনেবল সেক্রেটারী মনে মনে সে নীলকে ভালবাসে কিন্তু দুজনের ধর্মীয় বিশ্বাসের পার্থক্যেও কারনে সাহস কওে কিছু বলতে পারছেনা তবে সুযোগের অপেক্ষায় আছে সে সুযোগ বুঝে তার মনের কথাটা একদিন ঠিকই বলবে সে...
রিটা: এসিটা অন কওে দেই তাহলে? আপনার কি আথা ব্যাথা করছে? আমি মাথাটা একটু মেসেজ করে দেই? ভাল লাগবে স্যার.. 
নীলের ।অনুমতির অপেক্ষা না করেই  সে ম্যাসেজ শুরু কওে দেয়
নীল: আেমার হাত যেন আমাকে শান্তিও পরশ দিচ্ছে..
সুযোগ বুঝে রিটাও নীলের সাথে আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে বসে, নিজের বুক দুটি নীলের দেহের সাথে লেপ্টে দিয়ে আদও করতে থাকে মাথায় না ঠিক কোথায় ঠিক বোঝার উপায় নেই।
নীল: রিটা কি করছ কি? ভাল করে মাথাটা টেপ বেশ ভাল লাগছে। ইয়েস স্যার,তাইতো করছি !রিটা এবারে সম্বিৎ ফিরে পায়।
রিটা: কি হয়েছে স্যার আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? এ্যানিথিং রং
নীল: নাথিং রং আই এ্যাম ফাইন বাট আই প্রোবাবলি মিসিং সামথিং,আই নিড পিচ ইন মাই হার্ট। হঠাৎ করেই ইমোশোনাল হয়ে পরে নীল।
রিটা:ওহ্ জিসাস কি হয়েছে আমাকে খুলে বলুন স্যার টেল মি না------
আর কি বলব বল, বলার কিই বা আছে? ৫বছর যাবৎ সংসার করছি একটা সন্তানের জন্য হা পিত্যেশ করছি কিন্তু ভাগ্যের কি নিয়তি দেখ এখনও সেই কাঙ্খিত সন্তানের মুখটা দেখতেই পেলামনা। সত্যিই আজব বৈকি! আর এদিকে তোমার ম্যাডামের যন্ত্রনায় একটু ড্রিংকস করতে পারিনা । কালকে একটু ড্রিংকস করে বাড়ী ফিরেছি অমনি ১৪৪ ধারা জারি হা!হা!হা!
রিটা: ওহ্ গড সত্যিই স্যার ম্যাডাম এখনও স্মার্ট হতে পারলনা। চলুন স্যার আজকে আপনাকে আমি ড্রিংকস করাব।
নীল: নাহ্ থাক শরীলটা ভাল নেই তুমি মাথাটাই একটু!
রাতে নীল বাসায় ফিরে আসে তবে মনটা মনেহয় বাইরের আছে। 
তিথি: হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি টেবিলে খাবার দিচ্ছি
----না আজকে খাবনা মুখে রুচি নেই বলে কেকিয়ে উঠে নীল।
তিথি: কি হয়েছে তোমার?
নীল:কই কিছু হয়নি তুমি খেয়ে নাও গে।
এভাবেই দিন গড়িয়ে রাত আসে ক্রমে ক্রমে তাদের দুজনের দাম্পত্য তথা স্বাভাবিক জীবন যাপনে কিছুটা শৈথিল্য দেখা দেয়। কয়েক মাস যাবৎ তাদের মধ্যে কোন রকম ফিজিকাল রিলেশন হয়না বললেই চলে। প্রকৃতি তার আপন নিয়মে গতিময় হয়। বর্ষার রিমঝিম বৃষ্টি শেষে শরতের মেঘমুক্ত নীল আকাশ উকি দেয়,কার্তিকে নবান্নের উৎসব চলে তদরুপ শীতের শুভ্র কুয়াশায় নাকাল হয় দরিদ্র জনজীবন,রস খাওয়ার ধুম পরে যায়। তেমনি আবার বসন্ত কালে গাছে গাছে নব পত্রের আগমনে মুখরিত হয়ে নতুন বউ সাজে প্রকৃতি কিন্তু কোন কিছুই তিথি ও নীলের জীবনকে একত্রিত করতে পারেনা।নীল,তিথির জীবন থেকে বহু দূরে চলে যায় আর এই সুযোগটাই লুফে নেয় রীটা তার উঠতি নরম দেহের কারিশমায় সহজেই নীল কে ঘায়েল করতে সক্ষম হয় ফলে পরিনতি যা ঘটার  তাই ঘটে নীল আর রীটা দে আর ইন ডিপ লাভ নাও!
এদিকে তিথিও শিক্ষিত মেয়ে নিজে অপমানিত বোধ করায় হঠাৎ-ই একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে  লেকচারারের চাকরি নিয়ে খুলনা চলে যায়। সেখানে তার এক দূর সম্পর্কেও ভাইয়ের বাড়ীতে থেকে কাজ শুরূ করে সে।
 রীটা আর নীল মুক্ত পাখির মত ঘুরে ফিরে  সারাদিন সারারাত , কোন কিছুকেই তাদের তোয়াক্কা নেই। কাজের মধ্যেও তারা অনেক সময় বেশ ঘনিষ্ঠ অবস্থায় থাকে! বিষয়টি নিয়ে অনেকে ফীসফিসানি করলেও সামনে কিছু বলার সাহস করেনা। নীল ছিল সংস্কৃত মনা মানুষ আর অল্প বয়সেই ঢের সম্পদের মালিক হয়ে উঠে সে রীটা আর নীল সিদ্ধান্ত নেয় তারা বিয়ে করবে অবশ্যি নীলের পরিবার  এই বিয়েতে প্রচন্ড আপত্তি করে কিন্তু রিটার পরিবার থেকে কোন সদুত্তর পাওয়া যায়না। বেশ ঘটা করে খ্রিস্টান ধর্মীয় অনুশাসনে বিয়ে করে রীটা আর নীল। 
 নীল তিথিকে ডিভোর্স করতে পারেনা, যেহেতু তাদের বিয়েটা ধর্মীয় রীতি মেনে অগ্নিসাক্ষি করে সাতপাকে সম্পন্ন হয় আর কোন কাগুজে দলিল না থাকায় সে আর ডিভোর্সের ঝামেলায় জড়াতে চায়না। সে ভাবে, যে সম্পর্ক চুকে গেছে তাকে আর ঘেটে কাজ নেই তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে। আসলে রীটার যৌনাতœক কোমনীয়  রসায়নটাই তাকে সাহায্য করেছে দ্রুত সব ভুলে যেতে।
রীটা: নীল চলনা আমরা হানিমুনে যাই, দুজনে হারিয়ে যাই পৃথিবীর অপরুপ সৌন্দর্যে চলনা।
নীল: কোথায় যাবে জানু বল তোমাকে আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থানে নিয়ে যাব বল তুমি।
রীটা: চল আমরা বালি দ্বীপে  আমাদের প্রথম হানিমুনটা সেলিব্রেট করি শুনেছি ওখানকার কালচারাল ফেসটিভাল গুলি নাকি খুবই মনোমুগ্ধকর আর বর্নিল হয়!্ দে আর রিয়েলি আ্যামেজিং!
নীল: ওকে ডান! আমি কালই টিকেটের বন্দোবস্ত করছি, ওহ! তোমার ডিজিটাল পাসপোর্ট আছে তো!
রীটা:হ্যা বাবা আছে তো তাহলে কবে যাচ্ছি আমরা 
নীল: অ্যাজ সোন অ্যাজ পসিবল
রীটা আর নীল যখন তাদের আসন্ন হানিমুন কিভাবে কালারফুল করা যায় সেই ভাবনায় মগ্ন তখন তিথি বহন করে চলেছে উত্তরাধীকার সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মীয় বিশ্বাস আর ভালববাসা।
নীল আর তিথি পারি জমায় ইন্দোনেশিয়ার একটি বিখ্যাত দ্বীপ বালিতে,তারা উভয়েই  সারাদিন প্রচুর হৈ হুল্লুর    ড্রিংকস বিভিন্ন রাইড ভ্রমন করে আনন্দের সাথে দিন কাটিযে দেয়। কিন্তু তুমি জান কি বাবা নীল যমদূত তোমার ঘারের উপর নিশ্বাস ফেলছে! রাতের বালি সত্যিই বর্ণিল বিভিন্ন রকমের আতশবাজী নৃত্যগীত বালিকে অন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায়। কাতারে কাতারে যুগল মধুর সময় কাটায় এই দ্বীপে! পর্যটন খাত থেকে প্রচুর আয় হয়  এখানকার বাসিন্দাদের। 
রীটাকে আজ অনেক বেশী সেক্রি লাগছে সর্ট স্কার্টের সাথে আধুনিক টপস পরে সে নিজেকে আরও বেশী মোহনীয় করেছে আজ। আসলে রীটা নিজের সব কিছু দিয়ে নীলকে ধরে রাখতে চায়। 
নীল: রীটা চল আমরা একটু নির্জন স্থানে গিয়ে বসি এই কোলাহল আর ভাল লাগছেনা তোমার সাথে আমার পারসুনাল কিছু কথা আছে।
রীটা:ওহ্ গড কি বলছ নীল! এখনিতো মজা হবে, শুরু হবে লোকাল কালচারাল এ্যাকটিভিটিস জাস্ট ইনজয় ইট বেবি! সময়তো রয়েছেই সোনা! পরে শুনবক্ষন।
নীল:নাহ্! তুমি শোন ভাল লাগছেনা আমি একটু একলা থাকি!
রীটা:ডোন্ট বি সিলি কাম অন এসো তো! 
নীল: নো থ্যাংকস দীর্ঘশ্বাস ছেরে বির বির করে বলে তুমিতো জাননা  আমিতো আসলে একটি সন্তানের কাঙ্গাল চৈত্রের প্রখর রোদে চাতক পাখি যেমন একফোটা বৃষ্টির সান্নিধ্য পেতে মুখিয়ে থাকে আমিও একটি সন্তানের মুখ থেকে বাবা ডাক শোনার জন্য অপেক্ষায় আছি। সে ধীর পায়ে রীটাকে একটা চুমু খায়। বলে ইনজয় সে ধীরে ধীরে রীটার থেকে ক্রমশ দূড়ে যেতে থাকে---------------
হঠাৎ বিকট আওয়াজে  কম্পিত হয় চারিদিক। কিছু উগ্র মৌলবাদী সংগঠনের বোমা হামলায়  থেমে যায় সবকিছু।রীটা অসহায়ের মত খুজতে থাকে নীলকে ,কিন্তু চারিদিকে লাশের স্তুপ, কারও হাত উড়ে গেছে কারও পা নেই  কারও আবার ছিন্ন মস্তক! জাহান্নামের মত ভয়াবহ চিত্র এই মর্ত লোকে! অসহায় মানুষের আতœ চিৎকারে ভারি হয়ে পরে বালি দ্বীপ। রীটা কোথাও নীলকে খুজে পায়না,সে নিজেও সামান্য আহত হয়েছে তবুও খুজে নীলকে, প্রিয়তমকে! অনেক খোজাখুজির পর খুজে পায় নীলের নিথর দেহ খানি। ওহ্ জিসাস! চিৎকারের ধ্বনি বালির নারিকেল গাছ সমুদ্রে প্রতিধ্বনিত হয়ে ফিড়ে আসে যন্ত্রনাকর হয়ে।
বালী বিস্ফোরনের খবরটি দ্রতই ছড়িয়ে পরে বিশ্ব গনমাধ্যমের কল্যানে ! তিথি অবশ্যি নীলের ফেসবুক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে জানতে পেরেছিল যে, সে এখন বালী দ্বীপে আছে। টিভিতে নিউজ দেখা মাত্রই অজানা আশংকায় কেপে উঠে তার বুক। নিজেকে সে ধরে রাখতে পারেনা অনেক দিনের বোবা কান্না আজ আতœ চিৎকারে পরিনত হয়।অঝোর ধারায় ঝরে পরে অশ্র“। ইন্দোনেশীয় সরকারের সহয়তায় গারুদা ফ্লাইটের একটি বিমানে  নীলের মরদেহ বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। মরদেহ রাখা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজের হিমঘড়ে! রীটা তার স্বামির মরদেহ কতৃপক্ষের কাছ থেকে বুঝে নিতে চায় কিন্তু সেখানেই ঘটে বিপত্ত্,ি তিথি শুভ্র শাড়ির আড়ালে  আশ্র“ সংবরন করে স্বামির নিথর দেহ ফিরিয়ে নিতে যে আগেই সেখানে উপস্থিত হয়েছে। দুই নাড়ির দাবির প্রেক্ষিতে জল দ্রুতই ঘোলাটে হয়ে পরে,কতৃপক্ষ বাধ্য হয়েই কোর্টের দ্বারস্থ হয়।
কোর্টে তিথির উকিল হিসাবে মনোনিত হন শ্যামল কান্তি ধর অন্যদিকে  রীটা তার উকিল হিসাবে নিয়োগ দেন রবার্ট ডি সুজাকে। আদালত কক্ষে বাদী বিবাদীদের পক্ষে বিপক্ষে যুক্তি তর্কের ঝর বইয়ে যায় নিজেদের বেটার প্রমানের জন্য। রবার্ট ডি সুজা এক জনাকির্ণ সাংবাদিক সন্মেলন করে বলেন যে রীটাই নীলের একমাত্র আইনত ওয়াইফ, কারন হিসাবে তিনি বলেন ক্যাথলিক চার্চে আইনমেনে তারা একে অপরের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন আর তাই নীলের শেষকৃত্য ক্যাথলিক চার্চের নিয়ম মেনেই হবে। 
অপর দিকে  শ্যামল কান্তি ধরও পাল্টা  প্রেস কন্ফারেন্স করে বলেন মামা বাড়ীর আবদার! বললেন আর ক্যাথলিক মতে শেষকৃত্য হয়ে গেল! আরে নীল কয়দিন ঘর করেছেন ঐ রীটা দেবীর সাথে হাতেগোনা কয়েকদিন আঙ্গুল দেখিয়ে! আর ভেবে দেখুন একবার  তিথী দেবীর সাথে কমকরে হলেও পাচ বছরের দাম্পত্য জীবন ছিল নীল বাবুর। তাছারা তিনিতো তিথী দেবীকে ডিভোর্স করেননি তাহলে কিভাবে তারা এই অন্যায় আবদার করেন? প্রয়াত নীল বাবুর শেষ কৃত্য অবশ্যই হিন্দু ধর্মিয় রীতি অনুযায়ী হবে এবিষয়ে মাননীয় জাজ যদি বিষয়টির  সঠিক রায় দেন তাহলে  বিজয় অবশ্যই আমাদের হবে। তিথী দেবীর হাতেই তার স্বামির মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।
এদিকে উভয় পক্ষের যুক্তিতর্কের কারনে মামলার আয়ু দিন দিন দীর্ঘায়িত হতে থাকে। উভয় পক্ষই নাছোর বান্দা প্রয়াত নীলযে তাদের ধর্মের-ই প্রতিনিধি ছিল এটা প্রমানে বদ্ধপরিকর।
প্রতিনিয়ত দুই বিধাব নাড়ীর বোবা কান্না গুলি অশ্র“ আকারে ঝড়ে পরে আদালতের কাঠ গড়ায়। তারা উভয়েই প্রিয়তম স্বামির মরদেহের উপর  তাদের একক অধিকার দাবি করেন। কোন ভাবেই নীলের রেখে যাওয়া অঢেল সম্পত্তি হাতছারা করতে চায়না। একপক্ষ নীলের নামে একটি চ্যারেটেবল হাসপাতাল বানাতে চায় তো অন্যপক্ষ বানাতে চায় লাইব্রেরী! কিন্তু এভাবে কতদিন  চলবে অনন্তকালতো আর কেস চলতে দেওয়া যায়না!
কিন্তু উভয় পক্ষ যেভাবে আদা জল খেয়ে নেমেছে তাতেতো মনেহয়না সহসাই এই কেসের কোন ক’লকিনারা হবে। তাহলে কি হবে? তবে কি নীলের মরদেহ অনন্তকালের জন্য ঢাকা মেডিকেলের হিমঘরে পরে রইবে! নাহ্ এটাতো হতে দেওয়া যায়না । অবশ্যই কিছু একটা করতে হবে। হয়তো নীলের  তৃষ্ণার্ত নগ্নদেহটি  বিভিন্ন অধ্যয়নরত চিকিৎসক গন গবেষনা কাজে ব্যাবহার করবেন।
তবে নীলের বিদেহী আত্মা তো আর দেহে বদ্ধ নয় আত্মাতো চিরন্তন শ্বাসত সেটি এখন কি করছে? সেকি তবে খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের নিকট ফিরে গেছে না হিন্দুদের ভগবান কতৃক আশ্রিত হয়েছে। সেকি খ্রিস্টানদের দ্বারা কল্পিত  বিশাল সমুদ্রতট বিশ্রিত হ্যাবেন -এ ঘুড়ে বেড়াচ্ছে না হিন্দুদের পুষ্প সুরভিত স্বর্গরাজ্যে বিরাজ করছে? নীল সত্যিকারে কোন ধর্মের অনুসারী ছিল? হিন্দু না খ্রিস্টান?
 এই প্রশ্নের সমাধান জজ সাহেব কিভাবে দিবেন? কোন যুক্তিতে বা কোন প্রমানের দ্বারা তার ধর্ম নির্ধারিত হবে। সৃষ্টিকর্তা স্বয়ং কি এই সমস্যার সমাধান দিতে পারবেন? আর যদি পারেনও তাহলে কিভাবে? সত্যিই তাই আজ বলতে ইচ্ছে হয় নীল তুমি কার? রীটা-------তিথী----না সৃষ্টিকর্তার? পাঠক আপনারাই বলুন নীল কার? আপনাদের উপরই ছেরে দিলাম বিচারিক ক্ষমতা।

No comments

বাংলাদেশ প্রগতি লেখক সংঘ. Powered by Blogger.